Arek Muktijudder Itihas
"২০২০ এর মার্চ মাসে যখন লক ডাউন ঘোষণা হল দেশে তখনও ঠিক বুঝিনি ঠিক কি হতে চলেছে। খবরের কাগজ বা টিভির নিউজ এর থেকেও দ্রুত গতিতে খবর ছড়িয়ে পড়তে লাগল হোয়াটসআপ এ। অনেক নতুন নতুন হোয়াটসআপ গ্রুপ তৈরিও হয়ে গেল সেই সুবাদে। খবর পেতে শুরু হলো হু ( WHO) কি বলছে, বিজ্ঞানীরা কে কি বলছেন, প্রচুর আর্টিকেল লেখা হতে লাগলো, আর সাধারণ মানুষের কথা, তাদের কঠিন ও প্রায় অসম্ভব জীবন যাপন এর কথা সবাই বিস্মৃত হতে লাগলো। কত মানুষ এর চাকরি গেল, কত মানুষ প্রায় রোজ করোনা ভাইরাস এর শিকার হয়ে প্রাণ বিসর্জন দিল তার হিসেব আর কেউ রাখতে পারল না। করোনা ভাইরাস তখন মনের আনন্দে বিশ্ব ভ্রমণ করছে। প্রচুর কবিতা ছড়া নকশা কার্টুন লেখা হয়ে ভরিয়ে দিল হোয়াটসআপ ফেসবুক। মনে হল তাই তো করোনার কারণে গাড়ি ঘোড়া ছুটছে না, তার মানে অটোমোবাইল পলিউশন কমে যাচ্ছে, প্রকৃতির রূপ ফিরে আসছে, দূষণ মুক্ত হচ্ছে পৃথিবী। কেউ কেউ এরকম পোস্টিং ও করে দিলেন সোস্যাল মিডিয়াতে যে ওজনের স্তর পাতলা হয়ে গিয়েছিল তা আবার ভরাট হতে শুরু করেছে। ঘরের কাছের প্রকৃতির রূপও নাকি এমন হয়ে গেছে আর লক ডাউন এর কারণে বাইরে লোকজন এর যাতায়াত ও তেমন নেই, তাই নাকি শহরের জনবহুল রাস্তায় চলে এসেছে ময়ূর, দেখাচ্ছে নাচ। এসবের ভিডিও দেখা যেতে লাগলো ইউটিউব এ।
যাঁরা কিছু দিন আগেও টিভি সিরিয়াল এর ব্যাপারে নাক কোঁচকাতেন তাঁরাই এখন এই লক ডাউন এ ঘরের বাইরে না যেতে পেরে, এমনকী ঐ সামনের চায়ের দোকানেও না যেতে পেরে সিরিয়াল দেখা শুরু করে দিয়েছে। হোয়াটসআপ এ কতো কী সারাদিন ধরে করে চলেছে। রান্না ঘরে যিনি কস্মিনকালেও ঢুকে দেখেননি কোথায় কি থাকে তিনি হঠাৎ করেই ভালো ভালো পদ রান্না করতে শুরু করে দিলেন। বাড়িতে সদস্যরা একে অপরকে সময় দিতে লাগলেন, স্বামী স্ত্রী কে সময় দিচ্ছেন, বন্ধু বন্ধুকে সময় দিচ্ছেন, কিন্তু হোয়াটসআপ এ। বাচ্চা দের কথা কেউ ভাবছে না, সময় দিচ্ছে না কেউ, শুধু লাভ হয়েছে ওদের একটা করে অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন পেয়েছে, আর তাতে অনলাইন পড়াশোনা করছে না অন্য কিছু করছে তা আর কেউ দেখছে না। ঘরে থাকতে থাকতে স্কুল এর কথা ভুলতে চলেছে বাচ্চারা, স্কুল বড্ড আপন হতে চলেছে ওদের কারো কারো কাছে।
এই ভাবে আর কতদিন চলতে হবে উত্তর নেই প্রায় কারোরই কাছে। হতাশা গ্রাস করছে মনকে, বাচ্চাদের মনকেও। বাইরে মৃত্যুর মিছিল আছে, কিন্তু চিকিৎসা নেই। এই মৃত্যুর মিছিল এ ডাক্তার নার্স বাদ নেই কেউ। পৃথিবীর অতিরিক্ত বোঝা নাকি কমছে! সিনিয়র সিটিজেন রা মৃত্যুর মিছিল এ যোগদান করছেন বেশি। এমনটাই পরিসংখ্যান বলছে।ছেলে বাংলাদেশ গিয়ে লক ডাউন এ আটকে গেছে, আর মা সন্তান এর কথা ভেবে ভেবে ইহলোক ত্যাগ করে চলে গেলেন, ছেলে শেষ দেখাও দেখতে পেলেন না।
এই বইটায় করোনার আবর্তে সমাজ এর বিভিন্ন স্তরে তার কি প্রভাব পড়েছে তাই আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে।করোনা সাম্যবাদী, বলেছেন এক ফেসবুক বা হোয়াটসআপ বন্ধু। কাউকেই ছাড়ে না। এক জয়েন্ট ফ্যামিলির সব সদস্যের মধ্যে দিয়ে এই সময় টাকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র, কোনো সম্ভাব্য সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয় নি বা কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করা হয়নি এই বইতে। "
Author Name
Bidyut BhattacharyaTerms and Conditions
All items are non returnable and non refundable